অবসরে নিজেদের নিয়ে ভাবার কিছুটা ভাল মুহূর্ত কাটানোর সুযোগ
বর্তমান সময়ে অনেক পরিবারেই স্বামী ও স্ত্রী দুজনই চাকরি করেন। অনেক ক্ষেত্রে দুজনের পেশা আলাদা, কাজের সময়টাও আলাদা হয়। স্বামী হয়তো এমন পেশায় আছেন, যেখানে কাজের সময়টা রাতে। আবার স্ত্রীর কর্মদিবস নয়টা-পাঁচটা। দেখা যায়, সারা দিনে মাত্র অল্প কিছুক্ষণের জন্য দেখা হয় স্বামী-স্ত্রীর। ছুটির দিনেও থাকে নানা কাজ, একসঙ্গে একটু গল্প করারও সময় হয় না। এই দূরত্ব সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি করতে পারে। নিজেদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টিও হয়। অনেক ক্ষেত্রে দুজনের মধ্যে একজনকে ছাড় দিয়ে টিকিয়ে রাখতে হয় বৈবাহিক সম্পর্ক।
ছুটির দিন এক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে কারণ আমরা অবসরে নিজেদের নিয়ে ভাবার কিছুটা ভাল মুহূর্ত কাটানোর সুযোগ পাই। এসব দিনে নিজেদের ভাল লাগার কাজগুলো করতে পারি। যেমন-
- একসাথে বেড়াতে যেতে পারি।
- ছেলেরা তাদের গৃহিণী কে ঘরের কাজে সাহায্য করতে পারেন।
- রান্না দুজনে মিলে করতে পারেন।
- দুজনে বসে অনেক্ষন গল্প করতে পারেন।
- গ্রামের বাড়ি কাছে হলে একদিনে ঘুরে আসতে পারেন।
- দুজনে মিলে শপিং করতে পারেন।
- ডিনার করতে বাইরে কোন ভাল রেস্টুরেন্ট এ যেতে পারেন।
দাম্পত্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব উভয়ের
কিছু কিছু দম্পতি মানসিক ও শারীরিকভাবে পরস্পর এতো বেশি বিচ্ছিন্ন অনুভব করে যে, তা সম্পর্কের ক্ষেত্রে সত্যিকারের তালাকের চেয়ে বেশি ক্ষতি করে। সারা বিশ্বে যুগলরা শোবার ঘরে দূরত্ব তৈরি হওয়া নিয়ে কথা বলা এড়িয়ে চলে থাকে। যদিও ওই যুগল এবং বৃহত্তর পরিবারের ক্ষেত্রে এই অবস্থা বাস্তবিক পক্ষে তালাকের চেয়ে বেশি ক্ষতি করে।
সবসময়ই সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে মাঝামাঝি একটি জায়গা ঠিক করে নেয়া; যা উভয়পক্ষের জন্যই সমঝোতার জায়গা, যা ভুল এবং ক্রমবর্ধমান একাকীত্ববোধকে কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে।
প্রত্যেকেরই সম্পর্ক ভালো করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া উচিত। কারণ ইতিবাচকতা সংক্রামক, তিনি বলেন। অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রবণতা কারো জন্যই সুফল বয়ে আনে না।
বৈবাহিক কাউন্সেলিংয়ের মারাত্মক প্রয়োজন থাকলেও, এশিয়া ও পশ্চিমা সম্প্রদায়ের মানুষেরা সেটা নিতে চায় না। তবে এটি এক্ষেত্রে বিশেষ ভুমিকা পালন করে। অনেক সময় আমাদের ভুল থাকা সত্তেও আমরা টা বুঝতে পারি না যা আমাদের সম্পর্ক কে খেয়ে ফেলে।
বিয়ে ভালো ও মন্দ- উভয় সময়ের জন্যই।
ফিরে আসার সম্ভাব্য উপায়
সম্পর্ক ভালো করতে হলে দুজনেরই সেটি সারিয়ে তোলার জন্য প্রবল ইচ্ছা থাকাটাই একমাত্র উপায়।
যদি তাদের মধ্যে একজনও অন্যজনকে কোণঠাসা করে ফেলেন, আপত্তি তোলেন, তাহলে সেটি শুধু খারাপই হবে। তাদের খোলামেলা কথা বলতে হবে এবং সেসময় শব্দ চয়ন সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। তা না হলে তারা পুরোপুরি বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন।
অনেক সময় একপক্ষ শুধু সবকিছু ঠিক করতে চায় কিন্তু অন্যপক্ষ আগের মতোই থাকে এবং পরিবর্তনের যেকোনো প্রচেষ্টাকেই ব্যর্থ করে দেয়।
যেকোনো সমস্যা কাটিয়ে উঠতে, দুই পক্ষকেই শিখতে হবে যে কিভাবে কোনো ঘটনা বাড়তে না দেয়া যায়। তাদের প্রায়ই কথা বলতে হবে, আপত্তিকর কোনো শব্দ বলা যাবে না, এমন আচরণ সবসময়ই পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে।
যদি স্বামী তার স্ত্রীকে কোনো উপহার দিয়ে অবাক করে না দেয় তাহলে সে কাজটি স্ত্রীকেই প্রথমে শুরু করতে হবে। সবসময় পদক্ষেপের জন্য বসে না থেকে তা শুরু করে দিলে সেটি অনেক বেশি কার্যকর হয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে কখনোই হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না, চেষ্টা করে যেতে হবে।
কিছু পরামর্শ
- দাম্পত্য জীবনের শুরুতেই যদি দুজনের কাজের সময় আলাদা হওয়ার কারণে দূরত্ব তৈরি হয়, তবে আলোচনা করে নিন। আলোচনা সাপেক্ষে একজন চাকরি পরিবর্তনও করতে পারেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
- একসঙ্গে যে সময়টুকু থাকছেন, তা যেন ‘কোয়ালিটি টাইম’ হয়। সারা সপ্তাহে এক দিন বা অর্ধেক দিন শুধু নিজেদের জন্য রাখতে হবে। ওই সময়টা পরস্পরের খোঁজখবর করে ভালোভাবে কাটালে সম্পর্কটা মজবুত হয়।
- সারা দিন দেখা না হলেও, ফোনে বা কোনো মাধ্যমে সব সময় যোগাযোগ করে মেসেজ দিয়ে খোঁজখবর নেওয়া উচিত সঙ্গীর। অল্প সময় কথা হলেও ভালোমন্দ জিজ্ঞাসা করা, কাজ কেমন হচ্ছে জানতে চাওয়া—এতটুকুই সম্পর্ককে ধরে রাখে। অর্থাৎ, সম্পর্কে একটা আস্থার জায়গা তৈরি করতে হবে। সঙ্গীকে এই আশ্বাস দিতে হবে যে পাশে আছি।
শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায়, সবকিছু একপাশে সরিয়ে রেখে দুজনের আলাদা করে, একান্ত কিছু সময় কাটানোর প্রয়োজন আছে। হোক না তা দুজনের কোনো আগ্রহের বিষয় নিয়ে টুকটাক গল্প। দাম্পত্য সম্পর্ক হলো পরস্পরকে সহায়তা করার। একজন কষ্টে থাকলে আরেকজন কোনোভাবেই ভালো থাকতে পারে না। এ জন্য নিজেদের কথা একে অপরকে জানাতে হবে। তবে তা অভিযোগের সুরে নয়।